হাফিজার ভাগ্যে আসলে কী ঘটেছে - BD Trends 24 । Breaking News । Latest News । Headlines । News । Bangla News

Breaking

BD Trends 24 । Breaking News । Latest News । Headlines । News ।  Bangla News

The Latest News from the BD and Around the World। Newspaper । Daily Star

Post Top Ad

Post Top Ad

Tuesday, October 22, 2019

হাফিজার ভাগ্যে আসলে কী ঘটেছে

হাফিজার ভাগ্যে আসলে কী ঘটেছে


হাফিজা হাসান
হাফিজা হাসান

তিন মাস ধরে নিখোঁজ ছিলেন ঢাকার ইডেন কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী হাফিজা হাসান। এ ঘটনায় তাঁর বাবা আমিনুল ইসলাম নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় অপহরণ মামলাও করেন।

এই মামলার অবস্থা জানতে তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবির) উপপরিদর্শক এমামুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথম আলোকে বলেছেন, আসামি আমিনুল ইসলাম ঢাকার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন গত বৃহস্পতিবার। আমিনুল ইসলাম আদালতের কাছে দাবি করেছেন, হাফিজা হাসান আত্মহত্যা করার পর তাঁর লাশ বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিয়েছেন।

হাফিজা হাসানের লাশ পাওয়ার বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হয়নি পুলিশ। তবে কেরানীগঞ্জে উদ্ধার হওয়া এক নারীর লাশের ছবির সঙ্গে হাফিজা হাসানের মিল রয়েছে বলে তাঁর স্বজনেরা দাবি করেছেন। আদতে ওই নারীর লাশ হাফিজা হাসানের কি না, তা জানার জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।

পুলিশ কর্মকর্তা এমামুল বলছেন, হাফিজা হাসান খুন হয়েছেন না আত্মহত্যা করেছেন, তা বলার সময় এখনো আসেনি। মামলাটি নিবিড়ভাবে তদন্ত করা হচ্ছে।

হাফিজার মোবাইলটি এখনো বন্ধ
হাফিজা আর আমিনুলের বাড়ি খুলনার ফুলতলায়। খুলনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির একটি কোচিং সেন্টারে তাঁদের পরিচয়। ইডেন কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পর হাফিজা গত বছর ঢাকায় চলে আসেন। আসামি আমিনুল ইসলাম মিরপুরের সরকারি বাঙলা কলেজে পড়াশোনা করেছেন। কেরানীগঞ্জের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তিনি চাকরি করতেন।

মেয়েটির পরিবার এবং মামলার কাগজপত্রের তথ্য অনুসারে, গত ১৮ জুলাই হাফিজার সঙ্গে সকালে তাঁর বাবা রবিউল হাসানের কথা হয়। এরপর দুপুর থেকে মেয়ের মোবাইল বন্ধ পান তিনি।

রবিউল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, মেয়ে হাফিজার মোবাইল বন্ধ পাওয়ার পর ঢাকায় চলে আসেন তিনি। সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। খোঁজ নেন তাঁর মেয়ের বান্ধবীদের কাছেও। যান ইডেন কলেজেও। কিন্তু কোথাও কোনো খোঁজ না পেয়ে পরে যান লালবাগ থানায়। প্রথমে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর নিখোঁজ হওয়ার ১১ দিনের মাথায় ২৯ জুলাই আমিনুল ইসলামের নামে অপহরণ মামলা করেন। আমিনুলকে হাফিজার শিক্ষক হিসেবেই জানতেন।

এই মামলার তদন্তভার পান লালবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুব্রত সাহা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত করতে গিয়ে দেখেন, ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী হাফিজা হাসান এবং আমিনুলের মোবাইল বন্ধ রয়েছে। এরপর আসামি আমিনুলের মোবাইলে কল ডিটেইলস রেকর্ড (সিডিআর) সংগ্রহ করেন। আমিনুলের অবস্থান দেখতে পান, কেরানীগঞ্জ ও মোহাম্মাদপুরের বিভিন্ন এলাকায়। মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে আমিনুলের পরিচিত আসাদুজ্জামান ওরফে আসাদ নামের এক যুবককে গত আগস্ট মাসে খুলনা থেকে গ্রেপ্তার করে আনেন। তবে প্রধান আসামি আমিনুলকে গ্রেপ্তার করতে তিনি সক্ষম হননি।

এরপর লালবাগ থানা-পুলিশের হাত ঘুরে মামলার তদন্তভার পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

আসামি আমিনুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
আসামি আমিনুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির এসআই এমামুল ইসলাম বলেন, প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে প্রথমে আসামি আমিনুলের অবস্থান জানার চেষ্টা করেন তিনি। পরে জানতে পারেন, হাফিজা হাসান নিখোঁজ হওয়ার আট থেকে দশ দিনের মাথায় যশোরের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে গেছেন আমিনুল। তখন আমিনুলের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেন। আমিনুলকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তাঁর পরিবারের সদস্যদের চাপ দেন। তবে তাঁকে না জানিয়ে দেশে ফিরে আমিনুল ঢাকার আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। সেখান থেকে তাঁকে গত ২৬ সেপ্টেম্বর কারাগারে পাঠানো হয়।

১৬ অক্টোবর পুলিশ কর্মকর্তা এমামুল আদালতে প্রতিবেদন দিয়ে বলেন, আমিনুল ইসলামের সঙ্গে হাফিজা হাসানের প্রেমের সম্পর্ক শুরু ২০১৬ সাল থেকে। এরপর এ বছরের ১৪ এপ্রিল ঢাকার আদালতে গিয়ে অজ্ঞাত এক কাজির মাধ্যমে হাফিজাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর ঢাকার কেরানীগঞ্জের আঁটি নয়াবাজার এলাকায় হাজি নুরুল আলমের বাসায় ভাড়া থাকতে শুরু করেন। এর ১ মাস ২২ দিন পর কেরানীগঞ্জের নূতন রায়েরচরে এমদাদ হোসেনের বাসার পঞ্চম তলায় স্বামী-স্ত্রী হিসেবে ভাড়া থাকতে শুরু করেন।

ডিবির এমামুল বলেন, আমিনুলের সঙ্গে প্রেম বা বিয়ে করার কথা বরাবরই তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাছে গোপন করে গেছেন হাফিজা। কেরানীগঞ্জে থেকে হাফিজা ইডেন কলেজে লেখাপড়া করতেন। ৫ জুলাই হাফিজা তাঁর চুল ছোট করেন। আর ১৭ জুলাই পরীক্ষা দিতে না যাওয়া এবং ফেসবুক ব্যবহার করা নিয়ে হাফিজা ও আমিনুলের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। দুজন আলাদা কক্ষে ঘুমান।

আমিনুল কেরানীগঞ্জে মক্কা হাউজিং নামের একটা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। ডিবির তথ্য বলছে, ঘুম থেকে ওঠার পর সকাল নয়টায় বাসা থেকে অফিসে চলে আসেন আমিনুল। এরপর তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে দুই দফা সকালে কথাও হয়।

পুলিশ কর্মকর্তা এমামুল বলেন, আমিনুলের জবানবন্দি অনুসারে, হাফিজার সঙ্গে সেদিন সকালে কথাও হয়। কিন্তু এরপর হাফিজা মোবাইল বন্ধ করে দেন। মোবাইল বন্ধ পেয়ে আমিনুল বাসায় ঢুকে দেখেন, তাঁর স্ত্রী হাফিজা শয়নকক্ষে নেই। পড়ার ঘরের দরজা ভেতর থেকে আটকানো। তখন দরজা ভেঙে হাফিজাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেন।

তদন্ত কর্মকর্তা এমামুল ইসলাম মনে করেন, ‘সুনির্দিষ্টভাবে এখনো কোনো কিছু বলার সময় আসেনি। হাফিজার মৃত্যুর রহস্য উদ্‌ঘাটনের জন্য তাঁর লাশের পরিচয়ের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া জরুরি। আমরা সে চেষ্টাই করে যাচ্ছি।’

ভ্যানচালকের সাক্ষ্য
মোবাইলের সূত্র ধরে ডিবির কর্মকর্তা এমামুল ইসলাম জানতে পারেন, ১৮ জুলাই রাতে আসামি আমিনুল এক ভ্যানচালকের সঙ্গে কথা বলেছেন। পরে ওই ভ্যানওয়ালাকে খুঁজে বের করেন। ভ্যানওয়ালার নাম আব্বাস ব্যাপারী ওরফে রাকিব।

ডিবির এমামুল ইসলাম বলেন, আব্বাসকে খুঁজে বের করার পর আমিনুলের বাসার ঠিকানা জানতে পারেন। আব্বাসকে আমিনুলের মুখোমুখি করেন। আমিনুল প্রথমে আব্বাসকে চেনেন না বলে দাবি করলেও পরে ঠিকই স্বীকার করে নেন, আব্বাসকে তিনি আগে থেকে চেনেন।

আব্বাস প্রথম আলোকে বলেন, আমিনুলকে তিনি আগে থেকে চিনতেন। প্রথম যখন তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে বাসায় ওঠেন, তখন তিনি মালামাল বহন করে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেদিন রাত আটটার দিকে আমিনুল তাঁকে ফোন দিয়ে বাসায় আসতে বলেন। বাসায় গিয়ে দেখতে পান, পাঁচটা লাগেজ। এর মধ্যে বড় একটা লাগেজ ছিল খুব ভারী। যে কারণে আমিনুল আর তিনি ধরাধরি করে লাগেজ পাঁচ তলা থেকে নামিয়ে ভ্যানে তোলেন। সেসব মালামাল নিয়ে আসেন মোহাম্মদপুরে বছিলা সেতুর ওপর। সেতুর মাঝামাঝি এলে আমিনুল তাঁকে মালামাল নামাতে বলেন। মালামাল নামিয়ে দিয়ে তিনি চলে যান।

তদন্ত কর্মকর্তা এমামুল ইসলাম বলেন, আমিনুল জবানবন্দিতে দাবি করেছেন, হাফিজার লাশ বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিয়ে আবার বাসায় চলে যান। এরপর যান আশুলিয়ায় তার এক আত্মীয়ের বাসায়। সেখান থেকে যশোরের বেনাপোল হয়ে ভারতে চলে যান।

পুলিশ আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, ভ্যানওয়ালা আব্বাস ব্যাপারীর জবানবন্দি পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় যে হাফিজাকে হত্যা করে তাঁর লাশ লাগেজে ভরে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিয়েছেন আসামি আমিনুল ইসলাম।

তদন্ত করতে গিয়ে ডিবি জানতে পারে, হাফিজার নিখোঁজ হওয়ার সাত দিনের মাথায় ২৫ জুলাই দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বিবির বাজারের কচুরিপনার মধ্যে এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই নারীর লাশ হাফিজার কি না, তা জানার জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করার ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ।

হাফিজার বাবা রবিউল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন মাস হয়ে গেল, আমি আমার মেয়ের খোঁজ পাইনি। আসামি আমিনুলকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। কী বলেছে, তা জানি না। তবে আমিনুলই আমার মেয়েকে হত্যা করেছে। আমি সুষ্ঠু তদন্ত চাই, আমি চাই আমিনুলের শাস্তি।’


সূত্র: প্রথমআলো

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad